নিউটন তারার সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধেছে ব্লাকহোলের!!


তারার সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধেছে ব্লাকহোলের

মহাকাশে ধুন্ধুমার!

যুদ্ধ বেধে গেছে। এক ভয়ানক যুদ্ধ। তার রেশ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। উত্তাল হয়ে উঠেছে মহাশূন্য। এক শক্তিশালী আলো ঢেউ আছড়ে পড়ছে মহাকাশে। জন্ম হচ্ছে জোরালো মহাকর্ষীয় তরঙ্গের। পৃথিবীর খুব কাছেই।

তারায়-তারায় যুদ্ধ বেধেছে কি?  নাকি তারার সঙ্গে টক্কর হচ্ছে বিশাল দৈত্যাকার কোনও ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের? মহাকাশবিজ্ঞানীদের ধারণা, সূর্যের থেকেও ভারী, দশাসই কোনও নিউট্রন তারার সঙ্গে অশান্তি চলছে পেল্লায় এক ব্ল্যাকহোলের। তেড়েফুঁড়ে যাচ্ছে একে অপরের দিকে। টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে নিজের দিকে। মহাজাগতিক বস্তুদের মধ্যে সংঘাত এতটাই তীব্র যে তার ধাক্কায় উথালপাথাল হচ্ছে মহাশূন্য। পৃথিবী থেকে ৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরেই এই যুদ্ধ চলছে।
নিউট্রন তারা এবং ব্ল্যাকহোলের এই লড়াইয়ে অন্য কেউ মদত দিচ্ছে কিনা সেটা অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। তাই মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন রহস্যময় কোনও মহাজাগতিক বস্তু (Mysterous Object) থেকে এক জোরালো মহাকর্ষীয় তরঙ্গকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। গান্ধীনগরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও চেন্নাইয়ের ম্যাথেমেটিক্যাল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা  ‘লাইগো’ (LIGO) ও  ‘ভার্গো’ (VIRGO) গ্র্যাভিটি ওয়েভ ডিটেক্টরের এই রহস্য মহাকর্ষীয় তরঙ্গের খোঁজ পেয়েছেন।

লাইগো ও ভার্গো এই গ্র্যাভিটি ওয়েব ডিটেক্টরগুলি রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব গ্র্যাভিটেশনাল ফিজিক্সের গবেষক অভিরূপ ঘোষ বলেছেন, এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের নাম রাখা হয়েছে ‘গ্র্যাভিটি ওয়েভ ১৯০৮১৪’ ।  দীর্ঘ সময় পরে ফের মহাকর্ষীয় তরঙ্গের দেখা মিলল মহাকাশে। মহাকাশবিজ্ঞানীদের অন্যতম বড় খোঁজ।

মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই নিউট্রন তারা বা নিউট্রন স্টার ভরে, আকারে সূর্যের চেয়েও বহুগুণ বড় হয়। এখানে যে নিউট্রন তারা ক্ষেপে উঠেছে তার ভর সূর্যের ভরে চেয়ে (Solar Mass)প্রায় আড়াই গুণ বেশি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী যে ব্ল্যাকহোল সেও কিছু কম যায় না। তার ভর সূর্যের ভরের চেয়ে প্রায় ২৩ গুণ বেশি। মহাকাশের এই দুই দৈত্যাকার মহাজাগতিক বস্তু একে অপরের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করছে। এই সংঘর্ষের ফলে তৈরি হচ্ছে তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ যা ঢেউয়ের মতো কম্পন তুলে ছড়িয়ে পড়ছে মহাশূন্যে। এই ঢেউয়ের কম্পনকেই বলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (Gravitational Wave)।  তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে এমন মহাকর্ষীয় তরঙ্গের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন আইনস্টাইন।


মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলেন, গ্যালাক্সি সাধারণত হয় একটা জমাট বাঁধা গ্যাসের স্রোতের মতো। তার  শরীরে বাসা বেঁধে থাকে কোটি কোটি নক্ষত্র। যাদের আকার ও ভর সূর্যের চেয়েও বহুগুণ বড়। এই বিশালাকয় তারাদের মধ্যে যুদ্ধ চলে অবিরত। আবার কখনও তারা গ্যালাক্সির মাঝে থাকা ব্ল্যাকহোলের সঙ্গেও ঝামেলা শুরু করে দেয়। মহাজাগতিক বস্তুদের এই ধাক্কাধাক্কিতে বিকট বিস্ফোরণে গনগনে লাভার স্রোতের মতো ধোঁয়া ও মৃত তারাদের শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ ছিটকে পড়ে চারদিকে। এই প্রলয় যেমন মৃত্যু ঘটায়, তেমনি জন্ম দেয় নতুন নক্ষত্রের। এনজিসি ৬৯৪৬ গ্যালাক্সিতে এমন তারায়-তারায় সংঘর্ষ বা সুপারনোভা (Supernova) দেখা গিয়েছিল।


মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলেন, যে কোনও গ্যালাক্সির মাঝে থাকা ব্ল্যাক হোলের অভিকর্ষ টান সাঙ্ঘাতিক হয়। ঘন জমাট বাঁধা গ্যাসের মেঘ, কাছে এসে পড়লে ওই রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলগুলি তাদের জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে সেগুলিকে গিলে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর যদি নিউট্রন তারার মতো বিরাট নক্ষত্রের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাত বেঁধে যায়, তাহলে দুজনেই একে অপরকে কাবু করার চেষ্টা করে। সংঘর্ষে উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যায়, যেগুলি আসলে প্রচণ্ড শক্তিশালী এক্স-রে বা গামা-রশ্মির স্রোত।

২০১৫ সালে দুটি ব্ল্যাকহোলের সংঘর্ষে এমন মহাকর্ষীয় তরঙ্গ দেখা গিয়েছিল, যার উৎস্থল ছিল পৃথিবী থেকে প্রায় ১৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। ২০১৭-তে ১৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ দেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবার মাত্র ৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরেই এমন মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ছটা দেখা যাচ্ছে।

                              Geography Organization

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আগামী রবিবার দেখা যাবে মহাজাগতিক দৃশ্য 'রিং অফ ফায়ার'

রাজস্থানে আঘাত আনলো উল্কার ধাতব খন্ড?

ডাউনলোড করুন আমাদের Geography Organization - এর অ্যাপ